মোহাম্মদ ইকবাল হাসান সরকারঃ
করোনার মধ্যেও প্রবাসী আয়ে গত দু’মাসে একের পর এক রেকর্ড তৈরি হয়েছে।এ মুহূর্তে রেমিটেন্সের জোয়ারে ভাসছে দেশ।তবে বিশ্লেষ করা বলছেন, এ জোয়ার কতটা স্থায়ী এবং টেকসই হবে- তা বলা কঠিন।উল্টো ভাটার টানের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন প্রাইভেট ডিটেকটিভকে বলেন, কয়েকটি কারণে প্রবাসী আয় বেড়েছে।কাছাকাছি দুই ঈদ উৎসব, ২ শতাংশ প্রণোদনা, করোনার কারণে হুন্ডি চ্যানেল স্থবির, কর্মহীন প্রবাসীরা দেশে ফেরত আসার আগে শেষ সঞ্চয়টুকুও পাঠিয়ে দিচ্ছেন।এসব কারণে রেমিটেন্স বেড়েছে।তবে এ উচ্চ ধারা এখন কতটা ধরে রাখা যায়- সেটাই হল চিন্তার বিষয়।চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসীরা প্রায় ২৬০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে একক মাস হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আহরণ।মোট আহরিত রেমিটেন্সের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ৭টি দেশ থেকে এসেছে ১৪৮ কোটি ডলার। শুধু সৌদি প্রবাসীরা পাঠিয়ে ছেন ৬৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার, যা দেশে আসা মোট রেমিটেন্সের ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছরের জুলাইয়ের চেয়ে ৯১ শতাংশ বেশি।২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাইয়ে সৌদি থেকে রেমিটেন্স এসেছিল ৩৩ কোটি ১২ লাখ ডলার। একই সঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম প্রাইভেট ডিটেকটিভকে বলেন, এখনও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রবাসী আয় হুন্ডির মাধ্যমে আসে।এটা পুরোপরি বন্ধ করা না গেলে প্রবাসী আয়ের এ ঊর্ধ্বগতি থাকবে না। এছাড়া জনশক্তি পাঠানোর ওপর জোর দিতে হবে।করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের ফলে অনেক প্রবাসী বেতন-ভাতা পায়নি।অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।ফলে মার্চ ও এপ্রিলে রেমিটেন্স পাঠাতে পারেননি প্রবাসীরা।পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে মে মাস থেকে আবারও রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। তবে অনেকে চাকরি হারিয়ে বা ব্যবসা গুটিয়ে দেশে ফিরতে জমানো সব অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।এসব কারণে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের মধ্যেও বেড়েছে রেমিটেন্স।বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভালো আয় আসছে। সরকারি প্রণোদনা ও রেমিটেন্স বিতরণ সহজ হওয়ায় আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে আয় আসা বাড়ছে।এর আগে এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল গত জুন মাসে, ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৫০-৬০ হাজারের মতো মানুষ বিদেশে কাজ করতে যান।এর মধ্যে সৌদিতে সবচেয়ে বেশি যান।দেশটিতে জানুয়ারি মাসে গেছেন ৫২ হাজার, ফেব্রুয়ারিতে ৪৪ হাজার আর মার্চে ফ্লাইট বন্ধের আগ পর্যন্ত গেছেন ৩৮ হাজার মানুষ।বর্তমানে ২২ লাখের মতো বাংলাদেশি অভিবাসী সৌদিতে রয়েছেন।এদিকে সম্প্রতি সৌদি আরবের ইংরেজি দৈনিক সৌদি গেজেটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, মহামারীর কারণে এ বছর সৌদির শ্রমবাজারে ১২ লাখ বিদেশি কর্মী চাকরি হারাবেন।জানা গেছে, করোনার কারণে হজের কার্যক্রম না থাকায় সৌদিতে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রবাসী শ্রমিকরা।বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গেল অর্থবছরে রেমিটেন্স পাঠানোয় শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সৌদি ছাড়া অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।জুলাইয়ে রেমিটেন্স আহরণের দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।দেশটি থেকে রেমিটেন্স এসেছে ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটি থেকে রেমিটেন্স এসেছে ২৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।গত অর্থবছরের জুলাইয়ে এসেছিল ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলার।গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন।দেশীয় মুদ্রায় যা এক লাখ ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)।এর আগে কোনো অর্থবছরে এত অর্থ দেশে আসেনি।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/১৬ আগষ্ট ২০২০/ইকবাল